লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল বিস্তারিত জানুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল
- লাহোর প্রস্তাব
- লাহোর প্রস্তাব কি
- লাহোর প্রস্তাব কাকে বলে
- লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন কে
- লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি
- লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব
- লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য
- লাহোর প্রস্তাবের ধারা সমূহ
- লাহোর প্রস্তাবের মূল কথা কি ছিল
- লেখহকের শেষকথা
লাহোর প্রস্তাব
লাহোর প্রস্তাব বা পাকিস্তান প্রস্তাব যাকে পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণাও বলা হয়ে থাকে। লাহোর প্রস্তাব হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে উপস্থিত প্রস্তাবনা। লাহোর হলো পাকিস্তানের পাঞ্জাবের প্রদেশের রাজধানী এবং করাচির পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের ২৬ তম শহর হলো লাহোর। লাভ হচ্ছে পাকিস্তানের অন্যতম রাজধানী যার আনুমানিক জিডিপি ২০১৯ সালের হিসাবে ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এটি বৃহত্তম পাঞ্জাবের শহর।
আরো পড়ুনঃ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল
১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ লাহোর প্রস্তাব অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগের অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর সভাপতি কে মুসলিম লীগের পক্ষ হইতে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব প্রারম্ভিক খসড়া তৈরি করে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান যা আলোচনা ও সংশোধনের জন্য লিখিত ভারত মুসলিম লীগের সাবজেক্ট কমিটির পক্ষে পেশ করা হয়।
সাধারণ অধিবেশনে মুসলিম লীগের পক্ষ হতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আবুল কাশেম ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব স্থাপন করেন এবং চৌধুরী খলিফুজ্জামান ও অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দের তা সমর্থন করে। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লিখিত ভারত মুসলিম লীগের উপমহাদেশে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম দেশের দাবী জানিয়ে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুমোদন করে।
লাহোর প্রস্তাব কি
লাহোর প্রস্তাব বা পাকিস্তান প্রস্তাব যাকে পাকিস্তানের মুক্তির ঘোষণা বলা হয় । লাহোর প্রস্তাব ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবী জানিয়ে উত্থলিত প্রস্তাবনা। ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিখিত ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন লাহোরে আহবান করা হয়েছিল।
আরো পড়ুনঃ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য ও পটভূমি
সেই বিখ্যাত বেঙ্গল টাইগার রাজনীতিবিদ এবং বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সেরা বাংলার একে ফজলুল হক ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একাধিক রাজ্য গঠনের দাবি নিয়ে প্রস্তাব পেশ করেন তাই এটি লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত। লাহোর প্রস্তাবে গৃহীত হওয়ার প্রস্তাবটিকে অবাস্তব বলে অবহিত করা হয়। যার ফলে ভারতের রাজনৈতিক শাসন ও আন্দোলন একদিকে নতুন মাত্রা যোগ করে। লাহোর প্রস্তাবের ফলে ভারত ভাগের দিকে নিয়ে যায়।
লাহোর প্রস্তাব কাকে বলে
ভারতীয় মুসলমানদের সামাজিক , সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পরিচিতি এবং অধিকার রক্ষায় জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার পর থেকে মুসলমানদের পক্ষে কথা বলা শুরু করে যা থেকে শুরু হয় বিভাজন। অবশেষে মুসলমানদের অধিকার রক্ষার জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি উঠে। লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানদের জাতীয়তাবাদের উত্থান হয়েছিল।
আর এই দাবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব। এই দাবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব.১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে
যোগ দিয়ে সেরা বাংলা একে ফজলুল হক যে ভাষণ দেন তা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে
পরিচিত। লাহোর প্রস্তাবের প্রধান তিনটি বিষয় ছিল।
- ভারতবর্ষের প্রতিটি এলাকাকে ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হবে।
- উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে এমনভাবে চিহ্নিত করতে হবে যাতে পরবর্তীতে আলাদা স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রাজ্যের গঠন করতে পারে।
- রাষ্ট্রগুলো শৃংখল সম্প্রদায় ধর্মীয় , সামাজিক , সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন কে
লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি
১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে বিংশ শতকের সুর দিয়ে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমান দুটি সম্প্রদায়ের পৃথক দলে ভাগ হয়। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্রিটিশরা মুসলমানদের পৃথক জাতি হিসেবে ভাবতে শুরু করে।১৯০৯ সালে পার্লামেন্টে সংস্করণ আইন মুসলমানদের জন্য সাম্প্রদায়িক আইনে নির্বাচনের অনুমতি দেয়।
তারপরে ইংল্যান্ডের হাউস অফ লটসের লর্ড মর্লে ঘোষণা করে যে ভারতীয় মুসলমানরা শুধু একটি আলাদা পৃথক ধর্ম অনুসরণ করে করে না বরং জীবনধারাও সামাজিক আচরণের দিক থেকেও একটি আলাদা জাতির সমান। স্যার সৈয়দ আহমেদ উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ভারতীয়দের রাজনীতির ছিন্নতার বীজ বপন করেছিলেন। তিনি প্রথমে বলেন যে ভারতে দুটি ভিন্ন জাতি দ্বারা বসবাস করে সেজন্য মুসলমান এবং হিন্দু অধ্যুষিত কংগ্রেস যোগ দিতে নিষেধ করেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি ২০২৪ দিবস
প্রথম মা যুদ্ধের সময় হতে মুসলমানরা পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি করেছিল। তাদের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৬ সালে লক্ষ্মী চুক্তি ও ১৯২৯ সালে জিন্নাহর ১৪ দফা গৃহীত হয়। যেটা লাহোর প্রস্তাবের বীজ বপন করে। ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন হয় । ১৯১১ সালের ১২ই ডিসেম্বর হিন্দুদের চাপে পড়ে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়।
যেটা ব্রিটিশ মুসলমান শাসকদের প্রতি মুসলমানদের মন ভেঙে দেয়। যার ফলে মুসলমানরা পৃথক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ১৯৩৭ সালে যখন কঙ্গুয়েজ নির্বাচনে জয়লাভ করে যার ফলে তখন দ্বারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্দেমাতরম গান গাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালায় যার ফলে তৈরি হয় লাহোর প্রস্তাব।
লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব। আপনারা অনেকে রয়েছেন যারা জানেন না লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব কি?লাহোর প্রস্তাব বা পাকিস্তান প্রস্তাব যাকে পাকিস্তানের মুক্তির ঘোষণা বলা হয় । লাহোর প্রস্তাব ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবী জানিয়ে উত্থলিত প্রস্তাবনা।
১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিখিত ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন লাহোরে আহবান করা হয়েছিল।আর এই দাবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব। এই দাবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে যোগ দিয়ে সেরা বাংলা একে ফজলুল হক যে ভাষণ দেন তা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত।
ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক তিনি লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৩৭ সালের প্রথম থেকে ভারতের প্রদেশের আইনসভার আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই নির্বাচনে ভারতীয় কংগ্রেস দল ছয়টি প্রদেশের সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্জন করে। মুসলিম লীগের কংগ্রেসের সাথে যুক্তভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব করলে কংগ্রেস অস্বীকার করে। মুসলিম লীগ বাংলা ও পাঞ্জাবের সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠন করে।
আরো পড়ুনঃবাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩
কিন্তু কংগ্রেস ১৯৩৭ সালের জুন মাসের ছয়টি প্রদেশে এককভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করে। অন্যান্য দল থেকে মন্ত্রী গ্রহণ না করাই বিশেষ করে যুক্ত প্রদেশের মন্ত্রী গঠন নিয়ে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে বিরোধিতার সৃষ্টি হয়। যার ফলে কংগ্রেস যখন জয়লাভ করে এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্দেমাতরন গান গাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং হিন্দিকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন।
যার ফলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গামা-হাঙ্গামায় তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থা বিপর্যয়ের দিকে চলে যায়। যার ফলে হিন্দু এবং মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করে। ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ অধিবেশনের জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্ব স্থাপন করেন।
- মুসলিম লীগের গুরুত্ব বৃদ্ধিঃ লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয়সমূহ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে উপমহাদেশে কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম লীগও একটি শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। যার ফলে ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম লীগের দাবি দাওয়ারও গুরুত্ব দিতে থাকে।
- নব দিগন্তের সূচনাঃ লাহোর প্রস্তাবের গৃহীত হওয়ার পর মুসলমান লীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ পায় যার ফলে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। ফলে মুসলমানদের মধ্যে এক নব দিগন্তের পথ উন্মোচিত হয়।
- রাজনীতির নতুন ধারা ও স্বাধীনতা আইন পাসঃ লাহোর প্রস্তাবের ফলে ভারতের রাজনীতিতে নতুন ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ভারতের সামাজিক অবস্থা বিপর্যয়ের দিকে যায়। ব্রিটিশ সরকার অনুভব করে যে ভারতের একটিমাত্র রাষ্ট্র গঠন এই সংকটের কোন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আইন পাশ হয়।
- স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের উদ্ভাবঃ ১৯৪৭ সালের লাহোর প্রস্তাবের ফলে ব্রিটিশ ভারতের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মের কথা উল্লেখ করা হয়। দ্বিজাতি তত্ত্বের কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুইটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এর ফলে ভারত উপমহাদেশে ১৯৪৭ সালে ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত অভ্যুদয় ঘটে।
- ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠানঃ লাহোর প্রস্তাবের ফলে উপমহাদেশে মুসলিম জাতি একটি আদর্শ জাতি হিসেবে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে। যার ফলে শক্তিশালী হয় মুসলিম জনগোষ্ঠী। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা অবশ্যম্ভবী হয়ে ওঠে বাঙালি এবং মুসলমান সহ উপমহাদেশের মুসলমানরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য।
- বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার বীজ হিসাবে লাহোর প্রস্তাব স্পষ্টভাবে বীজ নিহিত ছিল। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের ভিত্তিতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য পূর্ব বাংলায় স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন যা ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের দিকনির্দেশনা প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ২১ দফা কর্মসূচি এবং ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচি লাহোর প্রস্তাবের সরাসরি উল্লেখ পাওয়া যায়। সেজন্য বলা যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য লাহোর প্রস্তাব বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব। আপনারা অনেকে রয়েছেন যারা জানেন না লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব কি?লাহোর প্রস্তাব বা পাকিস্তান প্রস্তাব যাকে পাকিস্তানের মুক্তির ঘোষণা বলা হয় । লাহোর প্রস্তাব ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবী জানিয়ে উত্থলিত প্রস্তাবনা।
১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিখিত ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন লাহোরে আহবান করা হয়েছিল।আর এই দাবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব। এই দাবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে যোগ দিয়ে সেরা বাংলা একে ফজলুল হক যে ভাষণ দেন তা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত।
ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক তিনি লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৩৭ সালের প্রথম থেকে ভারতের প্রদেশের আইনসভার আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই নির্বাচনে ভারতীয় কংগ্রেস দল ছয়টি প্রদেশের সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্জন করে। মুসলিম লীগের কংগ্রেসের সাথে যুক্তভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব করলে কংগ্রেস অস্বীকার করে। মুসলিম লীগ বাংলা ও পাঞ্জাবের সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠন করে।
আরো পড়ুনঃ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল
কিন্তু কংগ্রেস ১৯৩৭ সালের জুন মাসের ছয়টি প্রদেশে এককভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করে। অন্যান্য দল থেকে মন্ত্রী গ্রহণ না করাই বিশেষ করে যুক্ত প্রদেশের মন্ত্রী গঠন নিয়ে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে বিরোধিতার সৃষ্টি হয়। যার ফলে কংগ্রেস যখন জয়লাভ করে এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্দেমাতরন গান গাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং হিন্দিকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন।
যার ফলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গামা-হাঙ্গামায় তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থা বিপর্যয়ের দিকে চলে যায়। যার ফলে হিন্দু এবং মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করে। ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ অধিবেশনের জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্ব স্থাপন করেন।
- মুসলিম লীগের গুরুত্ব বৃদ্ধিঃ লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয়সমূহ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে উপমহাদেশে কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম লীগও একটি শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। যার ফলে ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম লীগের দাবি দাওয়ারও গুরুত্ব দিতে থাকে।
- নব দিগন্তের সূচনাঃ লাহোর প্রস্তাবের গৃহীত হওয়ার পর মুসলমান লীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ পায় যার ফলে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। ফলে মুসলমানদের মধ্যে এক নব দিগন্তের পথ উন্মোচিত হয়।
- রাজনীতির নতুন ধারা ও স্বাধীনতা আইন পাসঃ লাহোর প্রস্তাবের ফলে ভারতের রাজনীতিতে নতুন ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ভারতের সামাজিক অবস্থা বিপর্যয়ের দিকে যায়। ব্রিটিশ সরকার অনুভব করে যে ভারতের একটিমাত্র রাষ্ট্র গঠন এই সংকটের কোন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আইন পাশ হয়।
- স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের উদ্ভাবঃ ১৯৪৭ সালের লাহোর প্রস্তাবের ফলে ব্রিটিশ ভারতের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মের কথা উল্লেখ করা হয়। দ্বিজাতি তত্ত্বের কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুইটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এর ফলে ভারত উপমহাদেশে ১৯৪৭ সালে ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত অভ্যুদয় ঘটে।
- ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠানঃ লাহোর প্রস্তাবের ফলে উপমহাদেশে মুসলিম জাতি একটি আদর্শ জাতি হিসেবে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে। যার ফলে শক্তিশালী হয় মুসলিম জনগোষ্ঠী। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা অবশ্যম্ভবী হয়ে ওঠে বাঙালি এবং মুসলমান সহ উপমহাদেশের মুসলমানরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য।
- বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার বীজ হিসাবে লাহোর প্রস্তাব স্পষ্টভাবে বীজ নিহিত ছিল। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের ভিত্তিতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য পূর্ব বাংলায় স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন যা ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের দিকনির্দেশনা প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ২১ দফা কর্মসূচি এবং ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচি লাহোর প্রস্তাবের সরাসরি উল্লেখ পাওয়া যায়। সেজন্য বলা যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য লাহোর প্রস্তাব বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
লাহোর প্রস্তাবের ধারা সমূহ
- ভারতবর্ষের প্রতিটি এলাকাকে ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হবে।
- উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে এমনভাবে চিহ্নিত করতে হবে যাতে পরবর্তীতে আলাদা স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রাজ্যের গঠন করতে পারে।
- রাষ্ট্রগুলো শৃংখল সম্প্রদায় ধর্মীয় , সামাজিক , সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
লাহোর প্রস্তাবের মূল কথা কি ছিল
- ভারতবর্ষের প্রতিটি এলাকাকে ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হবে।
- উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে এমনভাবে চিহ্নিত করতে হবে যাতে পরবর্তীতে আলাদা স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রাজ্যের গঠন করতে পারে।
- রাষ্ট্রগুলো শৃংখল সম্প্রদায় ধর্মীয় , সামাজিক , সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
- দেশের যেকোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা লিখিত বিষয়গুলো মৌলিক নীতিতে উল্লেখ থাকবে
তৌহিদ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url